Thursday, December 18, 2014

বড়দিন

ছোটবেলায় মিশনারি স্কুলে পড়তাম। তাই শীতের ছুটিটা হত লম্বা। তখন আমরা বেড়াতে যেতাম। কিন্তু বেড়াতে গিয়েও বড়দিনের দিনটায় ঘোরার সঙ্গেই জুড়ে যেত একটূ স্পেশাল খাওয়াদাওয়া। বেড়ানোর ডেস্টিনেশন কোনো শহর হলে, খুঁজেপেতে একটা কেক কিনে আনা হত। না পেলে, অন্য কোনো স্পেশাল মেনু। একবার বড়দিনের আমরা মাউন্ট আবু তে ছিলাম। হোটেলের বারান্দায় রোদে পিঠ ঠেকিয়ে জমিয়ে মাংস ভাত খাওয়া হয়েছিল মনে আছে। আর একবার ছিলাম কৌসানি তে। সেবার অবশ্য গান্ধী আশ্রমের ভেতরে থাকার কারণে আলাদা করে কোনো কেক টেকের ব্যবস্থা করা যায়নি। তবে সন্ধ্যেবেলা ঘরের মধ্যে কম্বলে গলা অব্দি ঢেকে গানের লড়াই খেলেছিলাম জমিয়ে। তারপর খাওয়ার ঘন্টা পড়লে গনগনে আগুনের আঁচে বসে গরম গরম ডাল রুটি সব্জি - আমার মত কট্টর আমিষাশীর কাছেও সেই খাবার ছিল অমৃত।

আর ছিল গ্রিটিং কার্ডের হুজুগ। স্কুলের গেটের বাইরে একটা লোক এক টাকা, দু টাকা, পাঁচ টাকার কার্ড নিয়ে বসত। আর থাকত সোনালী ছোট ছোট ঘন্টা, চকচকে রঙিন বল, নানারকমের রিবন, ছোট্ট সান্টা কলস...ক্রিস্টমাস ট্রি সাজাবার উপকরণ্লস্মায়ের কাছে পয়সা চেয়ে নিয়ে কার্ড কিনতাম। হিসেব করে। যার যার থেকে কার্ড পাবার আশা ছিল তাদের প্রত্যেকেই যাতে প্রয়োজনে রিটার্ন কার্ড দিতে পারি, হিসেবে যেন গন্ডগোল না হয়, সে ব্যপারে সতর্ক থাকতে হত। ছুটি পড়ার দিন আর ইউনিফর্ম নয়। রঙিন জামা পরে স্কুলে যাওয়া হত। ক্যারল গাইত গানের দল। আর মিত্র স্যার সান্টা সেজে ঝুলিতে লজেন্স ভরে হলের ভেতরে ঘুরতেন। মাঝে মাঝে থলিতে হাত ঢুকিয়ে এক মুঠো  লজেন্স তুলে এনে ছুঁড়ে দিতেন আমাদের মধ্যে হরির লুটের কায়দায়। সকলে ওমনি হামলে পড়তাম একটা বয়েজের অরেঞ্জ লজেন্স পাব বলে।

এখন তো কত বড় হয়ে গেছি, তাও ঐ ডিসেম্বরের পঁচিশ তারিখটা এলেই এক টুকরো প্লাম কেকের জন্য ফ্লুরিজ কি ক্যাথলিন কি মনজিনিস দৌড়ই। মনের মধ্যে ফরফর করে প্রজাপতি উড়তে থাকে। খালি মনে হয় কি যেন একটা করা উচিৎ। কিছু একটা না করলেই নয়। যীশুবাবার জন্মদিন বলে নয়, একটা গোটা শৈশব কৈশোরের অভ্যেস ধরে রাখব বলেই বোধহয়। আর পার্ক স্ট্রীটের বাৎসরিক আলোর মান রাখব বলে।

No comments:

Post a Comment