Friday, December 19, 2014

নয়ন তোমারে পায় না দেখিতে...

পিঁক পিঁক পিঁক  করে যন্ত্রগুলো বেজে চলেছে ফিল্মি উদ্যমে। একগাদা ডিজিটাল মিটার আর তাতে অনেকগুলো সংখ্যা। কিছু সংখ্যার মানে বুঝি, কিছু গ্রিক। একটা মেশিনের মিটার তোমার 'রেস্পিরেশান' মাপছে। সেটায় মিটার ২১, ২০, ১৯ হতে হতে এখন ১৪ এ ঠেকেছে। আমি জানি ওটা আর বাড়বে না। কমতে কমতে এক সময়ে থেমে যাবে। হাসপাতালের এইচ ডি ওয়ার্ডের এসি টা বেশ জোর চলছে। তোমার গা খুব ঠান্ডা হয়ে গেছে। তোমার ডান হাতের তর্জনীটাও। আমি জানি তোমার চোখ খোলা হলেও তুমি আর আমাকে দেখতে পাচ্ছ না। তবুও তোমার মাথায় একবার হাত বুলিয়ে দি। একবার ডাকি। বলা তো যায় না, যদি শুনতে পাও...যদি সাড়া দাও! সাড়া দাও না তুমি। দৃষ্টিহীন চোখে সামনের দেওয়ালের দিকে চেয়ে নিঃশ্বাস নিতে থাকো ধীরে। আরো ধীরে। বুঝতে পারো না, সর্বশক্তি দিয়ে ধরে আছি তোমার ডান হাতের তর্জনীটা - যেটা ধরে এযাবৎকাল কাটিয়েছি। বুঝতে পারো না, তোমার বুকের ওঠাপড়ার দিকে কি অসীম আগ্রহে তাকিয়ে আছি। যন্ত্রের সঙ্গে লড়াই করতে করতে এক সময় থেমে যাও। ঠান্ডা ঘরটায় তখন শুধু তুমি আর আমি। লড়াই শেষ করে নিশ্চিন্ত ঘুমের আশ্রয়ে তুমি। আর লড়াই শুরুর প্রস্তুতিপর্বে আমি।এক হাতে তোমার হাতটা ধরে থেকে অন্য হাতে তোমার চোখ দুটো বন্ধ করে দিয়ে যখন তাকিয়ে আছি দুটো বন্ধ পলক আর অল্প ফাঁক হওয়া ঠোঁটের দিকে, হঠাৎ সেই গানটা মনে গেল, যেটা তুমি লোডশেডিং হলে গাইতে। সেই দুটো লাইন মনে মনে গুনগুন করতে থাকলাম - 

"জানি আমি তোমায় পাব নিরন্তর লোক-লোকান্তরে যুগ-যুগান্তর–
 তুমি আর আমি মাঝে কেহ নাই, কোনো বাধা নাই ভুবনে।"

তর্জনীর আশ্রয় ছেড়ে বেরলাম। সবাইকে খবরটা দিতে হবে। সবাইকে জানাতে হবে, কারুর হাত না ধরেই আমি দিব্যি চলতে পারি...।

No comments:

Post a Comment