Tuesday, February 17, 2015

ঘুমের মধ্যে বাষ্পেরা

আমি মানুষটা এমনিতে খুব শরীর সর্বস্ব। ইন্দ্রিয়সর্বস্ব। চোখ কান জিভ ঠোঁট দিয়ে সর্বদা শুষে নিতে চাই চারপাশের ছোটখাটো পৃথিবীটাকে। সকালের রোদ, চায়ের কাপের ধোঁয়া, শাওয়ারের ফেনা ফেনা জল, সর্ষেবাটার ঝাঁঝ, লোহা টিন কাগজওয়ালার পাড়া কাঁপানো হাঁক, কবিতার অসুখী বিড়াল, ফাল্গুনের প্রেম, অ্যাশট্রেয় জমে থাকা পুরনো পোড়া ফিল্টারের কটু গন্ধ...সব। অথচ, আজকাল মানুষের গায়ের ছোঁয়াচ এড়িয়ে চলি। ভালোবেসে কেউ হাতের রেখায় হাত রাখবে ভাবলে ভয় হয়। ভয় হয়, অন্য দেহের খাঁচার উত্তাপে প্রেসার কুকারের মত গুমোট চাপে বন্দী করে রাখা বাষ্পেরা জল হয়ে যাবে। বুকে মাথা রাখতে, চুলে বিলি কাটতে দিতে, পুষে রাখা কাটা দাগের পুঁজ রক্ত দেখাতে সাহস লাগে। বর্ম খুলে, শক্তির ছাল চামড়া খুলে দুর্বলতার কঙ্কালটুকু আরেক জোড়া চোখের সামনে মেলে ধরার মতো বুকের পাটা, মৃত্যু আমাকে দেয়নি।

তার চেয়ে সহজ নিজেকে ভেঙ্গে, টুকরোগুলো ছড়িয়ে দেওয়া রান্নাঘরে, চ্যাটের বাক্সে, ট্রেনের আড্ডায়, বিলিং সেকশনের লাইনে, ট্যাক্সির আধো অন্ধকার শরীর চেনার ঘেরাটোপে। দিনের শেষে ড্রেসিং টেবিলের লম্বাটে আয়নার সামনে বসে তুলোর বলে দুধসাদা ক্লিন্সিং মিল্ক লাগিয়ে তেল, কালি, হলুদ, লিপ্সটিক, কাজল মুছে নিতে নিতে চুপসে যাওয়া কালচে ধূসর তুলোর দিকে পরিতৃপ্তির দৃষ্টি বুলিয়ে নিতে নিতে আঁচল ভরে কুড়োতে থাকি ছড়িয়ে পড়া আমিগুলোকে। ফুটলাইটের হলদে আভাসে ঘুম আনতে আনতে পাশবালিশ আর আমার মধ্যে পড়ে ওরা মিশে যেতে থাকে চুলে, নখে, কানের লতিতে, কড়ে আঙুলের তিলে। 

ভোরের স্বপ্নে যারা আসে, তাদের সঙ্গে নির্ভয়ে করমর্দন করি।  

No comments:

Post a Comment